গঙ্গারামপুর ১৪ আগস্ট দক্ষিণ দিনাজপুর :————কুড়ি বছর পরে সভাধিপতির চেয়ার গেল তপন ব্লকে।দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তপন ব্লকের ড্যাশ এলাকার তিনবারের জেলা পরিষদের আসনে জয়ী চিন্তামণি বিহাকে সভাধিপতি করা হয়েছে। তপন ব্লকের আদিবাসী অধ্যুষিত কেশরকুড়ি এলাকার বাসিন্দা চিন্তামণি বিহা সেই এলাকা থেকে কোনদিনও প্রধান যেমন হয়নি,তেমনি সাধারণ পরিবার থেকে উঠে আসা চিন্তামনি বিহাকেই জেলা পরিষদের সভাধিপতি করে জেলার আদিবাসী ভোটব্যাঙ্কে মাস্টার্স স্টোক দিয়েছে লোকসভা ভোটের আগে রাজ্য তৃণমূল নেতৃত্ব।সূত্র বলছে ,রাজ্যের মন্ত্রী বিপ্লব মিত্রের হাতেই থাকলো জেলা পরিষদের কতৃত্ব।গরিব ঘরের মেয়েকে নিয়ে তার পরিবার ও এলাকাবাসীরা একাধিক উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছে তারা। কে হবে জেলা পরিষদের সভাধিপতি তা নিয়ে গুঞ্জন চলছিল জেলাজুড়ে বহুদিন ধরেই ।শেষে রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেস তরফে পাঠানো খাম খুলতেই জেলা পরিষদের সভাধিপতির চেয়ারে বসলেন তপন ব্লকের ১১গোফানগর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রত্যন্ত এলাকা আদিবাসী অধ্যুষিত কেশরকুড়ি গ্রামের মেয়ে চিন্তামনি বিহা। লোকসভা ভোটের আগে আদিবাসীদের মহিলাকেই সভাধিপতি করা হল বলে অনেকে মনে করছেন,তবে গ্রামবাসীরা খুশি। তারা চান চিন্তামনি যেন আরো বড় জায়গায় গিয়ে কাজ করতে পারে,করবে জেলার সকল গ্রামের উন্নয়ন ।
বাম আমলে গঙ্গারামপুরের নারায়ন বিশ্বাস। মহিউদ্দিন আহম্মেদ। গঙ্গারামপুর ব্লক লাগোয়া বংশীহারীর মাগদালিনা মুর্মু সভাধিপতি হয়েছিলেন।তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর গঙ্গারামপুরের ললিতা টিগ্গা ও লিপিকা রায় সভাধিপতি হন। এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ফল প্রকাশের পর থেকে গঙ্গারামপুর সহ আশপাশ ব্লকের একাধিক প্রার্থীর নাম সভাধিপতি হিসেবে ঘোরাফেরা করছিল। কিন্তু এদিন সকলকে চমকে দিয়ে সভাধিপতি হন তপন ব্লকের আদিবাসী অধ্যুষিত কেশরকুড়ি গ্রামের তিনবারে জেলা পরিষদের আসনে জয়ী চিন্তামণি বিহা। সহকারী সভাধিপতি হয়েছেন কুশমন্ডির অম্বরিশ সরকার। চিন্তামণি বিহা ২০১৩ সালে তৎকালীন জেলা তৃণমূলের সভাপতি বিপ্লব মিত্রের হাত ধরে তৃণমূলে যোগদান করেন। রাজনীতির করতে গিয়েই তৎকালীন জেলা তৃণমূলের সভাপতি বিপ্লব মিত্র চিন্তামনি বিহাকে রাজনীতির ময়দানে নামান।২০১৩ সালে বিপ্লব মিত্রই জেলা পরিষদের প্রার্থী করেন তাকে। তখনো সে বিপুল ভোটে জয়ী হয়।দল আবার থাকে ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী করলে সে সেবারো তিনি ব্যাপক ভোটে জয়লাভ করেন। ২০২৩ সালে শাসক তৃণমূল কংগ্রেস জেলা পরিষদের আসনে প্রার্থী করলে এবারও তিনি ব্যাপক ভোটে জয়লাভ করেন তপনের আসন থেকে।চিন্তামণি বিহা বিভিন্ন সময় জেলা পরিষদের কর্মদক্ষ থাকাকালীন দল তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ তুলতেই পারিনি। সেদিন তার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল কিভাবে জীবন যাপন করেছেন তিনি।
তপন ব্লকের গোফানগরের দন্ডি গ্রাম থেকে কয়েক কিলোমিটার দুরে গেলে আদিবাসী অধ্যুষিত কেশরকুড়ি গ্রাম।আদিবাসী কৃষক পরিবারের মেয়ে চিন্তামনি বিহা।পরিবারে রয়েছে চার বোন,এক ভাই। ভাইবোনের মধ্যে চিন্তামনি তৃতীয়।দুই দিদির বিয়ে হয়ে গেছে। ভাই নিজের ইচ্ছেতে বিয়ে করে বাইরে থাকেন। বর্তমানে বাড়িতে বয়স্ক মা ও তাদের ছোট বোন।রোজগারে উৎস বলতে বাবার রয়ে যাওয়া কিছুটা জমি,বাড়িতে থাকা হাঁস-মুরগি ও ছাগল। গতবছর বাবা মারা যাবার পর সংসারের দায়িত্ব পড়ে চিন্তামনির কাঁধে।
পর পর দুইবার জেলা পরিষদের আসনে জিতে মৎস্য ও প্রানী সম্পদ কর্মাধ্যক্ষ হলেও এখনো তিনি মাটির দেওয়াল বাড়িতে বসবাস করেন,মেঝেতে ঘুমান।অর্থের সমস্যার জন্য শ্রমিক না লাগিয়ে নিজেদের জমিতে ধান রোপন করার কাজ করেন সভাধিপতি চিন্তামনী বিহা।
নব নির্বাচিত জেলা পরিষদের সভাধিপতি চিন্তামনির মা বুধিয়া বিহা বলেন,মেয়ে সভাপতির পদ পাওয়ায় ভীষন খুঁশি। মানুষের জন্য যেন কাজ করতে পারে। সেটাই আমার আশা। চিন্তাবনি বিহার ছোট বোন জানালেন, খুব খুশি হয়েছি দিদি এমন পদের চেয়ারে বসায়। সমগ্র জেলায় উন্নয়নের কাজ করবে বলে আমরা আশাবাদী।
প্রতিবেশি পুম্প এক্কা বলেন,বহু কষ্টের মধ্য দিয়ে চিন্তামনি রাজনীতি করে। গত এক বছর আগে তাঁর বাবা মারা গেছে। তারপর থেকে সংসারের সমস্ত দায়িত্ব চিন্তামনির কাঁধে পড়ে। পেটের খাবার জোগাড় করতে চিন্তামনি এখনো ধান রোপন করেন। এতদিন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার পর এবার সভাধিপতি হওয়ায় আমরা ভীষণ খুশি। আমাদের গ্রামের মেয়ে জেলার মানুষের জন্য কাজ করে আরো যেন বড় জায়গায় যেতে পারে।
এলাকার এক গৃহবূধ সুমিত্রা ওঁড়াও বলেন,আমাদের গ্রামে পানীয় জলের খুবই কষ্ট।এখনো সব জায়গার রাস্তা পাকা হয়নি। চিন্তামনি জেলা পরিষদের সভাধিপতি হওয়ায় আশাকরি এসব সমস্যা সমাধান হবে,এলাকায় স্বাস্থ্য কেন্দ্র হবে।
প্রতিবেশি মৃত্যুঞ্জয় এক্কা বলেন,চিন্তামনি সভাধিপতি হওয়ায় আমরা গ্রামবাসী ভীষণ খুশি হয়েছি।হয়তো এবার আমাদের গ্রামে বহু সমস্যার সমাধান হবে। রাজনীতি মহল মনে করছে বিপ্লব মিত্র ঘনিষ্ঠ চিন্তামনি বিহা সভাপতির চেয়ারে বসায় তার হাতে কর্তৃত্ব থাকবে।

