বালুরঘাট, ১৬ জুন :———-— স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে এক টিবি রোগীকে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ দেবার অভিযোগকে ঘিরে তুমুল চাঞ্চল্য। প্রায় দুমাসের মেয়াদ উত্তীর্ণ ওই ওষুধ বালুরঘাট পুরসভার কুন্ডু কলোনী সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকেই দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। শুক্রবার এই ঘটনা সামনে আসতেই রীতিমতো হইচই পরিস্থিতি তৈরি হয় বালুরঘাটের নামাবঙ্গী এলাকায়। যদিও এই ঘটনা ভুলবশত কারণেই হয়েছে বলে দাবি করেছেন এক স্বাস্থ্যকর্মী। এদিকে এই ঘটনার পর থেকেই আতঙ্কিত টিবি রোগী অমিত ঘোষের শারিরীক অসুস্থতা আরো বেড়ে গিয়েছে বলে দাবি করেছেন তার পরিবারের লোকেরা। পুরো বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক বলেই ব্যাখ্যা করেছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুদীপ দাস।
জানা গেছে, বালুরঘাট শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নামাবঙ্গী এলাকার বাসিন্দা অমিত ঘোষ প্রায় দুই মাস আগে টিবি রোগে আক্রান্ত হন। আর্থিক সক্ষমতা না থাকায় হতদরিদ্র ওই পরিবার অমিতের চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালের শরণাপন্ন হন। বেশকিছুদিন আগে শহরের কুন্ডু কলোনি এলাকার সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকেই টিবি রোগের ওষুধ নিয়ে আসে অসুস্থ অমিত ও তার পরিবারের লোকেরা। শিক্ষাগত যোগ্যতা ওই হতদরিদ্র পরিবারে কারোরই তেমন না থাকায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধের ব্যাপারটি তাদের কারোরই নজরে আসে নি। যার কারণে প্রায় ৪২ টি মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধও খেয়ে ফেলে অসুস্থ অমিত। বৃহস্পতিবার এই বিষয়টি প্রথম নজরে আসে অসুস্থ অমিতের বাড়িতে বেড়াতে আসা তার নিকট এক আত্মীয় ভাস্কর ঘোষের। যা জানতেই চোখ কপালে ওঠে গোটা পরিবারের। প্রায় দুমাস আগের মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে দেওয়া হয়েছে ওই অসুস্থ রোগীকে। বিষয়টি নিয়ে অমিত ও তার পরিবারের লোকেরা শহরের ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দরবার করতেই মারাত্মক সেই ভুলের কথা স্বীকার করেন সেখানকার কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীরা। কিন্তু পরবর্তীতে সেখানে হাজির হওয়া এক স্বাস্থ্য আধিকারিক তাদের পালটা হুশিয়ারি দিয়েছেন পুলিশ ও আদালতে যাবার। যা নিয়েই কিছুটা ভীতও হয়ে পড়েন ওই হতদরিদ্র পরিবার। এদিকে এই ঘটনার পর থেকেই ক্রমশ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ওই টিবি রোগী। দুমাস আগে মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়া টিবি রোগের ওই ওষুধ সরকারী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কিভাবে আসলো ? আর আসবার পরেও তা কেনই বা স্বাস্থ্য কর্মীদের নজরে এলো না ? এদিন এই ঘটনা সামনে আসবার পরেই এমন একগুচ্ছ প্রশ্ন উঠেছে।
অমিত ঘোষ নামে ওই টিবি রোগী বলেন, ৪২ টি ওষুধ খাওয়ার পর জানতে পেরেছেন তাকে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ দেওয়া হয়েছে। তার এক আত্মীয় ওই ওষুধ দেখবার পরেই বিষয়টি জানতে পেরেছেন। তারপর থেকেই অতিরিক্ত অসুস্থতা বোধ করছেন।
ভাস্কর ঘোষ নামে রোগীর এক আত্মীয় ও প্রতিবেশী বিশ্বজিৎ সরকার বলেন, তাদের চোখেই প্রথমে এই বিষয়টি ধরা পড়ে। সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে কেন মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ দেওয়া হবে এরকম একজন রোগীকে। বিষয়টি প্রশাসনের গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। এই ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে সেটাও গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুদীপ দাস বলেন, অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। দুমাসের মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ দেওয়ার বিষয়টি স্বাস্থ্য কর্মীদের সম্পুর্ন গাফিলতির বিষয়। ইতিমধ্যে একজনকে শোকজ করে এই ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে।

