সীমান্তের কাঁটাতার ভেদ করে দুর্গাপূজার ঢাকের বোল হিলিতে। উৎসবের উলুধ্বনিতে মেতে উঠতে শুরু করেছে গোবিন্দপুর

উত্তরবঙ্গ কলকাতা দক্ষিণবঙ্গ দেশ প্রথম পাতা বিদেশ বিনোদন রবিবার রাজ্য শরীর ও স্বাস্থ্য

পিন্টু কুন্ডু, বালুরঘাট, ৭ অক্টোবর —— দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি সীমান্তে কাঁটাতারের ওপারে বিএসএফ কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে ঘেরা ছোট্ট গ্রাম উচা গোবিন্দপুর। ভারত-বাংলাদেশের রাজনৈতিক উত্তেজনার মাঝেও এই গ্রামে দুর্গাপূজা যেন এক মিলনমেলার উৎসব হয়ে ওঠে প্রতিবছর, যেখানে ধর্মের গণ্ডি ছাড়িয়ে গ্রামবাসীদের এক সেতুবন্ধনে আবদ্ধ করে। ৭০ বছরের পুরনো গোবিন্দপুরের সার্বজনীন দুর্গোৎসব আজও দুই বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সুরকে বয়ে নিয়ে চলেছে।

এক সময় এ পূজা ছিল এপার-ওপারের মানুষের মিলনক্ষেত্র। বাংলাদেশ থেকে মানুষজন এসে পূজার আনন্দ ভাগ করে নিতেন। তবে সাম্প্রতিক অস্থিরতা ও সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের কারণে সেই চিরচেনা চিত্র বদলে গেলেও গ্রামবাসীরা আজও নিজেদের উৎসবের আনন্দে মেতে থাকেন। পূজার কয়েকদিন ধরে বসে গ্রামীণ মেলা, যেখানে ছোট ছোট দোকান আর খাবারের স্টলগুলো ঘিরে এলাকাটি পরিণত হয় উৎসবের প্রাণকেন্দ্রে। মন্ডপের প্রতিমা আসে বালুরঘাটের বাদামাইল থেকে, আর পূজার রীতি-নীতি সামলান পুরোহিত শুধাংশু চক্রবর্তী। রাতের বেলা বিএসএফের কড়া নজরদারির কারণে শহরে পুজো দেখার সেভাবে সুযোগ না থাকায়, গ্রামের মানুষেরা নিজেদের উদ্যোগে আয়োজন করেন নাচ, গান, আবৃত্তি ও নাটকের অনুষ্ঠান। পুজো মণ্ডপ ঘিরেই চলে আনন্দ-উৎসবের রঙিন আয়োজন। এই দুর্গাপূজা কেবল আচার বা ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি গোবিন্দপুরের মানুষের কাছে তাদের অস্তিত্ব ও ঐতিহ্য ধরে রাখার লড়াই।

পুজো কমিটির সম্পাদক অতুল চন্দ্র মণ্ডল বলেন, “এখানে পূজা মানেই এক পরিবারের মতো মিলিত হওয়া, সীমান্তের সমস্ত বাঁধাকে পিছনে ফেলে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া।”

সরকারি অনুদান প্রাপ্তির পর এবার পূজার আয়োজন আরও জাঁকজমকপূর্ণ হয়েছে। কাঁটাতারের ওপারে এই পূজায় আজও শোনা যায় ঢাকের শব্দ, উলুধ্বনি আর শঙ্খধ্বনি, যা জানান দেয়—সীমানার বেড়া কোনো সংস্কৃতি বা উৎসবকে থামিয়ে রাখতে পারে না। দুর্গাপূজার এই মন্ডপ তাই শুধু গোবিন্দপুরের নয়, এটি দুই বাংলার আবেগ আর ঐতিহ্যের এক মিলনস্থল।

দিয়া সরকার নামে গ্রামের খুদে এক শিশু বলেন, পুজোর কয়েকটি দিন আমরা সকলেই নাচ, গান আনন্দে মেতে থাকি। কেননা শহরের পুজো দেখতে যেতে আমাদের অনেকরকম সমস্যা হয়।

গ্রামবাসী কনিকা মন্ডল ও সাগর মহন্তরা বলেন, আগে এই পুজোকে ঘিরে দুদেশের মানুষের মেলবন্ধন থাকলেও বিগত কয়েকবছর ধরে বাংলাদেশের নানা অস্থিরতায় তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে পুজোর এই কয়েকটি দিনে তারা গ্রামবাসীরাই একত্রিতভাবে পুজোকে ঘিরে নানা অনুষ্ঠান করে থাকেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *