বালুরঘাট, ২২ নভেম্বর —— ঐতিহ্য, ভক্তি আর মহিমার মেলবন্ধনে শুরু হল দক্ষিণ দিনাজপুরের শতাব্দী প্রাচীন বোল্লা কালী মেলা। প্রায় সাড়ে সাত হাত উচ্চতার বোল্লা কালীর মূর্তি দেখতেই উত্তরবঙ্গসহ দেশ-বিদেশ থেকে ছুটে এসেছেন লক্ষাধিক ভক্ত। রীতি মেনে রাসপূর্ণিমার পরের শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এই পুজো এবং তিন দিনের মেলা উত্তরবঙ্গের অন্যতম বৃহত্তম উৎসবে পরিণত হয়েছে।
কথিত আছে, প্রায় ৪০০ বছর আগে জমিদার বল্লভ চৌধুরীর আমলে এক মহিলা স্বপ্নাদেশে একটি পাথর খণ্ড মাতৃরূপে পুজো করেন। যার নাম অনুসারেই ভাষান্তরে জায়গাটির নাম হয়েছে বোল্লা। পরে জমিদার মুরারী মোহন চৌধুরী ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা লড়ে বোল্লা মায়ের আশীর্বাদে জয়লাভ করেন। যে কৃতজ্ঞতায় তিনি এই মন্দিরটি নির্মাণ করেন। সেই থেকে শুরু হওয়া এই পুজো আজ লক্ষাধিক ভক্তের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে। তিনদিনের এই মেলায় ভিড় সামলাতে নেওয়া হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কয়েক হাজার পুলিশ ও সিভিকের নিরাপত্তা বেষ্টনীতে আবদ্ধ রয়েছে গোটা বোল্লা মেলা চত্বর। শুধু তাই নয় শতাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে গোটা এলাকার নজরদারিতেও। ভক্তদের সুবিধার্থে স্থাপন করা হয়েছে অস্থায়ী থানা ও হাসপাতাল।
তিন দিনের এই উৎসব শুধুমাত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং উত্তরবঙ্গের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি। মেলা প্রাঙ্গণে দোকানপাট, খেলাধুলা, এবং আলোকসজ্জায় ভরে উঠেছে গোটা এলাকা। দেশের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় মেলা হয়ে ওঠা বোল্লা কালী মেলা উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যের গর্ব এবং ভক্তি-ভালবাসার উজ্জ্বল উদাহরণ।
বোল্লা মন্দিরের পুরোহিত অরূপ চক্রবর্তী বলেন, এবারে দেবীকে হীরের টিপ, সোনার জিহ্বা ও রুপোর মুন্ডু মালা দিয়ে সাজানো হবে। ৫ কেজি রুপোর নূপুর থাকবে দেবীর পায়ে। বলি নিয়ে এখনও কোন নির্দেশ তাদের কাছে এসে না পৌছালেও প্রশাসনের নির্দেশ মতোই সমস্ত পুজো পরিচালনা হচ্ছে।
বোল্লা মন্দিরে পুজো দিতে আসা এক ভক্ত তথা চিকিৎসক পয়োধি ধর বলেন, মায়ের জাগ্রত রুপ ও মাহাত্ম্যেই প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ ভক্ত ছুটে আসে এই বোল্লা মন্দির প্রাঙ্গণে। এই পুজো শুধুমাত্র দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা নয়, গোটা রাজ্যের মানুষের কাছে একটা ঐতিহ্যশালী পুজো হিসাবেই পরিচিত হয়েছে।

