জলপাইগুড়ি:- চিকিৎসকদের কটুক্তি, হুমকি দেওয়ার অভিযোগ মৃত রোগীনীর পরিবার এবং তাদের সঙ্গে আসা লোকজনদের বিরুদ্ধে। ঘটনায় নাম জড়িয়েছে এক তৃণমূল কাউন্সিলরেরও। পুলিশের বিরুদ্ধেও নিরাপত্তা দিতে না পারার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার জেরে মঙ্গলবার রাতে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় জলপাইগুড়ি মেডিকেল কলেজের অন্তর্গত জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। গোটা ঘটনা ঘিরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে আর জি কর এর ঘটনার পর হাসপাতালগুলিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার যে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিলো সরকার প্রশাসন এবং পুলিশের তরফে, তা কি শুধুই ফাঁকা বুলি?
জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে জলপাইগুড়ির মাশকলাই বাড়ির এক ক্যান্সার আক্রান্ত মহিলাকে নিয়ে হাসপাতালে আসে পরিবারের লোকেরা। চিকিৎসক জানান ততক্ষণে মৃত্যু হয়েছে ওই লিপিকা দাস নামে ওই মহিলার। এরপর পরিবারের লোকেরা দেহ নিয়ে যেতে চাইলে, কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, নিয়ম অনুযায়ী ব্রডডেথ হলে ময়নাতদন্ত করার পরই দেহ ছাড়া হবে এবং ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়া হবে। যদিও পরিবারের তরফে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দেহ ছেড়ে দেওয়ার জন্য এবং ডেথ সার্টিফিকেট দেওয়ার জন্য জোরাজুরি শুরু করা হয়। মুচলেকা দিয়ে দেহ নিয়ে যেতে চান তারা। তাতে চিকিৎসকরা রাজি হননি। এরপরই গণ্ডগোল শুরু হয়। অভিযোগ, মৃত মহিলার পরিবারের লোকেরা কিছু এলাকার লোক নিয়ে এসে চিকিৎসকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার শুরু করেন। চিকিৎসকদের কটুক্তি, এমনকি প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা। এক মহিলা চিকিৎসককেও হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। একসময় জোর করে মৃতদেহ নিয়ে চলে যায় পরিবারের লোকেরা।আরও অভিযোগ, জলপাইগুড়ি পুরসভার ২২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলার পিংকু বিশ্বাসের উপস্থিতিতেই সমস্ত ঘটনা ঘটে। অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধেও। হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পে দুইজন পুলিশ কর্মী থাকলেও, তারা নিরাপত্তা তো দেওয়া দূরের কথা, পুরো ঘটনা ঘটার সময় দূরেই দাঁড়িয়ে ছিলেন বলে অভিযোগ চিকিৎসকদের। এরপরই চিকিৎসকদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে মেডিকেল কলেজের হস্টেল থেকে চলে আসে প্রথম এবং দ্বিতীয় বর্ষের প্রায় ২০০জন চিকিৎসক-পড়ুয়া। তারা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে ধর্ণায় বসে পড়ে। তাদের বক্তব্য, পুলিশ নিরাপত্তা দিতে অক্ষম, তাই তারা সিনিয়র চিকিৎসকদের নিরাপত্তা দিতে এসেছেন। খবর ছড়িয়ে পড়তেই জলপাইগুড়ি নাগরিক সংসদের সদস্যরা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের লোকেরাও চিকিৎসকদের সমর্থনে চলে আসেন হাসপাতালে। খবর পেয়ে আসেন হাসপাতালের অ্যাডিশনাল সুপার এবং অন্যান্য চিকিৎসকরা। ঘটনার বেশ কিছুক্ষন পর কোতোয়ালি থানার পুলিশ বাহিনী আসে। এরপর কোতোয়ালি থানার আইসি সঞ্জয় দত্তের সঙ্গে বৈঠক করেন হাসপাতাল কতৃপক্ষ এবং চিকিৎসকরা। আইসির সামনেই পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন চিকিৎসকরা এবং হাসপাতাল কতৃপক্ষ। বাইরে ধর্ণাও চলতে থাকে চিকিৎসক পড়ুয়াদের। এরপর হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করে হাসপাতাল কতৃপক্ষ। পুলিশের তরফে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়৷ এরপরই হাসপাতাল কতৃপক্ষের অনুরোধে রাত আড়াইটে নাগাদ ধর্ণা তুলে নেয় চিকিৎসক-পড়ুয়ারা। আজ, বুধবার ফের এই ঘটনা নিয়ে মেডিকেল কলেজ কতৃপক্ষ বৈঠকে বসবেন বলে জানিয়েছেন। এদিন চিকিৎসক থেকে শুরু করে হাসপাতালের অ্যাডিশনাল সুপার প্রত্যেকেই হাসপাতালে নিরাপত্তার খামতি এবং পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন। নাগরিক সংসদও একই প্রশ্ন তুলেছেন। বাম নেতৃত্বও তৃণমূল এবং পুলিশ, উভয়েরই ভূমিকা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন । যদিও ২২নং ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর পিংকু বিশ্বাস অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার দাবি, মৃত মহিলা তার ওয়ার্ডের বাসিন্দা এবং তিনি জনপ্রতিনিধি হওয়ায় খবর পেয়ে এসেছেন। অন্য কেউ হুমকি দিয়ে থাকতে পারে। তার জন্য তিনি চিকিৎসকদের কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন। যদিও তাতে সমস্যা মিটছে না। প্রশ্ন উঠছে, আর জি কর কাণ্ডের পর হাসপাতালগুলির নিরাপত্তা নিয়ে সরকার, প্রশাসন এবং পুলিশ যে ভারিভুরি আশ্বাস দিয়েছিলো তা কি শুধুই ঢক্কানিনাদ? ফাঁকা বুলি? অন্তত এদিব রাতে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের ঘটনা তো তাই প্রমান করছে।

