বালুরঘাট, ২৫ অক্টোবর—– রাজ্যজুড়ে রাজনৈতিক উত্তেজনার আবহে দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরে রবিবার বিজেপির ‘সংকল্পযাত্রা’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে চড়ল উত্তেজনার পারদ। গঙ্গারামপুর স্টেডিয়ামে আয়োজিত জনসভায় রাজ্য সরকারকে তীব্র আক্রমণ শানালেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মঞ্চে দাঁড়িয়ে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে তাঁর দাবি, “মমতা থাকলে চাকরি হবে না। রাজ্যে নিয়োগ দুর্নীতি চরমে, যুব সমাজের ভবিষ্যৎ ধ্বংসের মুখে।”
ভাষণে শুভেন্দু আরও বলেন, “আজ বাংলার ছাত্র-যুবকরা হতাশ। অভিভাবকেরা সন্তানদের উচ্চশিক্ষা নিয়েও ভাবতে পারছেন না। শিক্ষক নিয়োগ থেকে সরকারি চাকরি—সবখানেই দুর্নীতির জাল। রাজ্য যদি সত্যিই চাকরি দিতে পারত, তবে এত আন্দোলন, ধর্না, মামলা চলত কেন?” তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট—পরিবর্তনই এখন একমাত্র পথ।
শুভেন্দুর পর বক্তৃতায় কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ও বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার জেলার মানুষের জন্য বড় প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, “২৬ তারিখ থেকে শুরু হচ্ছে পরিবর্তনের জোয়ার। আগামী দিনে বাংলায় বিজেপি ক্ষমতায় এলে দক্ষিণ দিনাজপুরে একটি পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল কলেজ গড়ে তোলা হবে, যাতে মানুষকে আর শিলিগুড়ি বা কলকাতায় চিকিৎসার জন্য ছুটতে না হয়।” তাঁর অভিযোগ, রাজ্যের বর্তমান সরকার বছরের পর বছর ধরে জেলার উন্নয়নকে “বঞ্চনার” শিকার করেছে।
এদিনের সভাস্থলে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ উগরে দেয় বিজেপি নেতৃত্ব। তাদের অভিযোগ, “রাজ্যে পুলিশ প্রশাসন এখন তৃণমূলের হাতিয়ার। বিরোধী দলের কর্মসূচি ব্যাহত করতে পুলিশ অযথা বাধা তৈরি করছে।” একাধিক নেতা প্রকাশ্যে বলেন, “পুলিশকে রাজনৈতিক চাপে রাখা হচ্ছে, নিরপেক্ষভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা নয়, পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকা নিচ্ছে।” যদিও পুলিশের তরফে এই অভিযোগে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। এদিনের সভায় দুই হেভিওয়েট নেতা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক বুধরায় টুডু, জেলা সভাপতি স্বরূপ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক বাপি সরকার, আদিবাসী মোর্চার রাজ্য সভাপতি জুয়েল মুর্মু সহ একাধিক রাজ্য ও জেলা স্তরের নেতা।
রাজনৈতিক মহলের মতে, গঙ্গারামপুরের এই সভা দিয়ে বিজেপি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে—দক্ষিণ দিনাজপুরে তারা আগ্রাসী ভঙ্গিতেই সংগঠন পুনরুজ্জীবনের পথে হাঁটছে। শুভেন্দুর কড়া আক্রমণ ও সুকান্তর উন্নয়ন প্রতিশ্রুতি—দু’টিই জেলার রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

