, বালুরঘাট, ১১ এপ্রিল দক্ষিণ দিনাজপুর : ——— ——– ছয় ঘন্টা হাসপাতালের বেডে শুয়েও মেলেনি চিকিৎসা, ঘটনার জেরে মৃত্যু হয় আদিবাসী প্রসূতি মহিলার। সোমবার এই ঘটনা নিয়ে দিনভর উত্তেজনা ছড়িয়েছিল বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে। যে ঘটনার চব্বিশ ঘন্টা না কাটতেই বদলি করা হল দক্ষিন দিনাজপুর জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে। শুধু তাই নয়, ঘটনার সঠিক তদন্ত করতে অতিরিক্ত জেলাশাসককে বিশেষ নির্দেশও দেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যে।
উল্লেখ্য, চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসের দৌরাত্ম্যে বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে এক প্রসূতি মহিলার বিনা চিকিৎসাতেই মৃত্যু হয়। সুমিত্রা সোরেন নামে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুমারগঞ্জ ব্লকের দেবীপুর এনাতুল্লাপুর গ্রামের ওই মহিলা হাসপাতালে ভর্তির পর প্রায় ছঘন্টা বিনা চিকিৎসাতেই বেডে পড়ে থাকেন। যার জেরে শুধুমাত্র ওই আদিবাসী মহিলারই মৃত্যু নয়, মহিলার পেটে থাকা শিশুরও মৃত্যু হয়। যে ঘটনা নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে মা ও শিশুকে খুনের অভিযোগ তোলেন বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার। শুধু তাই নয়, ৪৮ ঘন্টার মধ্যে অভিযুক্তর শাস্তি না হলে হাসপাতাল সুপার অফিসে তালা ঝুলিয়ে দেবার হুশিয়ারিও দেন তিনি। পুরো ঘটনা নিয়ে মৃতর পরিবারের লোকেরা চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ তুলে সরব হন। যা নিয়ে হাসপাতাল সুপারকে একটি লিখিত অভিযোগও করেন তারা। যেখানে উল্লেখ করা হয়, কোন চিকিৎসা না পেয়ে দীর্ঘ ছয় ঘন্টা হাসপাতালের বেডে শুয়েছিলেন সুমিত্রা। একবারের জন্যও তাকে ছুয়ে দেখেনি চিকিৎসকরা। আর তার জেরেই মৃত্যু হয়েছে মা ও শিশুর। মৃতার স্বামী রাজেশ টুডু জানিয়েছিলেন, শুধুমাত্র সিজার করার জন্যই স্ত্রীকে কুমারগঞ্জের বরাহার থেকে জেলা হাসপাতালে নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু বড় বড় ইমারতের নীচে বিনা চিকিৎসায় যে তার স্ত্রী ও পেটে থাকা সন্তানের মৃত্যু হবে তা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি। হাসপাতালে ভর্তি করার পর ছয়ঘন্টা কেটে গেছে কিন্তু একজন চিকিৎসক ও এসে তার স্ত্রীকে ছুয়ে দেখেনি। সোমবারের এই ঘটনার পর চব্বিশ ঘণ্টা না কাটতেই বদলি করা হয় জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুকুমার দে কে। দীর্ঘ আট বছরেরও বেশি সময় ধরে এজেলাতেই ছিলেন তিনি। যাকে সরিয়ে ওই চেয়ারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সুদীপ দাসকে। সুদীপ দাস বর্তমানে কালিম্পং এর ডেপুটি সিএমওএইচের দায়ীত্বে রয়েছেন। শুক্রবার দক্ষিন দিনাজপুর জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিসেবে যার দায়ীত্ব নেবার সম্ভবনাও রয়েছে। এদিকে ওই ঘটনার চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে সুকুমার দে র বদলি হওয়াতে জোর গুঞ্জন ছড়িয়েছে গোটা জেলাজুড়ে। দীর্ঘ সময় ধরে একই ব্যক্তি ওই চেয়ারে থাকবার কারণেই জেলায় এমন বেহাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বলে মনে করছেন অনেকে। যার বদলিতেই কিছুটা ঘুরে দাড়াতে পারে জেলার চিকিৎসা ব্যবস্থা বলেও মনে করছেন অনেকে।
দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক তথা রোগী কল্যান সমিতির চেয়ারম্যান বিজিন কৃষ্ণা বলেন, আদিবাসী ওই মহিলার এমন মৃত্যুর বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব সহকারে দেখছে প্রশাসন। হাসপাতাল সুপারের নির্দেশে যে তদন্ত হচ্ছে তার রিপোর্ট দু একদিনেই হাতে পাওয়া যাবে। এছাড়াও অতিরিক্ত জেলাশাসককে এব্যাপারে একটি তদন্তের রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘটনায় কারো গাফিলতি সামনে আসলে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করবে প্রশাসন।

