যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ভাঙার চক্রান্ত চলছে। এতদিন বাংলা থেকে এই অভিযোগ তুলে বারবার সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার মেঘালয়ের মাটিতে দাঁড়িয়েও দৃপ্ত কণ্ঠে তাঁর হুঙ্কার, ‘দিল্লিতে বসে রাজ্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে দেব না।’ মঙ্গলবার শিলংয়ের স্টেট সেন্ট্রাল লাইব্রেরি অডিটরিয়ামে উত্তর-পূর্বের এই ছোট্ট রাজ্যের যাবতীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে কনভেনশন আয়োজন করেছিল তৃণমূল। সেখানেই একথা জানান নেত্রী।
প্রত্যয়ী মমতার এই বার্তায় কার্যত ভোটের ডঙ্কা বেজে গেল। দু’মাস বাদে ‘মেঘের আলয়ে’ বিধানসভা নির্বাচন। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, গেরুয়া শিবিরকে বাক্যবাণে বিঁধে পাহাড়ি রাজ্যে ভোট প্রচারের ঢাকে কাঠি দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। ১৯৭২ সালের ২১ জানুয়ারি অসম ভেঙে নতুন রাজ্য মেঘালয়ের জন্ম হলেও, গুয়াহাটির নিয়ন্ত্রণ এতটুকু কমেনি। সেই প্রেক্ষিত সামনে রেখেই এদিন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মমতা, ‘গুয়াহাটি থেকে নয়, দিল্লি থেকেও নয়, মেঘালয়ের নিয়ন্ত্রক হবে গারো, খাসি আর জয়ন্তীয়া পাহাড়ের ভূমিপুত্ররা।’ এটা এ রাজ্যের বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবি। মমতা তাতে মান্যতা দেওয়ায় করতালির গর্জনে তখন ইউ সোসো থাম অডিটরিয়ামে কান পাতা দায়। মেঘালয়ের বিশিষ্ট কবি ইউ সোসো থাম। খাসি মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের দাবিকে সামনে রেখে তিনি আজীবন কবিতা লিখেছেন।
গত ২২ নভেম্বর অসম সীমানা সংলগ্ন জমির বিবাদকে কেন্দ্র করে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল পশ্চিম জয়ন্তীয়া পাহাড়ের মুকরো। অসম পুলিস ও বনরক্ষীদের গুলি কেড়ে নেয় তরতাজা পাঁচটি প্রাণ। এদিন সেই হতভাগ্য পরিবারগুলির পাশে দাঁড়ান মমতা এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতিটি পরিবারকে পাঁচ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন তাঁরা। মুকরো এখন গোটা মেঘালয়ের স্পর্শকাতর ইস্যু। মুখ্যমন্ত্রী তথা শাসকজোটের প্রধান শরিক এনপিপি নেতা কনরাড সাংমা এখনও সেখানে যাওয়ার সময় পাননি। বিজেপিও তাই! স্পর্শকাতর সেই ইস্যুকে হাতিয়ার করে এদিন তাঁদের বিঁধেছেন মমতা। সুর চড়িয়ে বলেছেন—‘মেঘালয়ের জমি ফেরত দাও। অসম বা দিল্লি কেন নিয়ন্ত্রক হবে এই রাজ্যের? এখানকার মানুষই নিজেদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রক হবে।’ সেই সঙ্গে তাঁর আর্জি, ‘তৃণমূলকে ভোট দিন, ক্ষমতায় আনুন। সীমান্তের জমি সংক্রান্ত সমস্যা আমরাই মেটাব।’
বিজেপি প্রচার করছে, ‘বাঙালির পার্টি, বাংলার পার্টি তৃণমূল শিলংয়ের নিয়ন্ত্রক হতে চাইছে’। সেই প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাননি মমতা। তিনি বলেন, ‘বাঙালি হিসেবে গর্বিত। তবে আমি ভারতবাসী। আমরা ভেদাভেদ করি না ভোটের জন্য। কলকাতা থেকে নিয়ন্ত্রণ কখনই হবে না। মানুষের নিয়ন্ত্রক হব কেন? মেঘালয়টা মেঘালয়বাসীরই।’

