বালুরঘাট, ৯ এপ্রিল—— দন্ডি বিতর্ক! পদ খোয়ালেন তৃণমূলের মহিলা নেত্রী প্রদীপ্তা চক্রবর্তী। তার পরিবর্তে ওই চেয়ারে বসানো হল আদিবাসী মুখ স্নেহলতা হেমব্রমকে। বালুরঘাট শহর লাগোয়া ভাটপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা ওই মহিলাকেই সংগঠনের দায়ীত্ব দেয় রাজ্য নেতৃত্ব। যা পঞ্চায়েত ভোটের মুখে আদিবাসী ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখতে কিছুটা মরিয়া প্রচেষ্টা তৃণমূলের বলেই মনে করছেন অনেকে। যদিও সেই যুক্তি উড়িয়ে দিয়েছেন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূল সভাপতি মৃণাল সরকার।
উল্লেখ্য, বিজেপিতে যোগ দেওয়ার অপরাধে চার আদিবাসী মহিলাকে রাতের অন্ধকারে প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা দন্ডি কাটিয়ে বিতর্কে জড়ান দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার মহিলা তৃণমূল নেত্রী প্রদীপ্তা চক্রবর্তী। যিনি প্রাক্তন পুর্ত মন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তীর পুত্রবধূ হিসাবেই পরিচিত। আদিবাসী মহিলাদের দিয়ে দন্ডি কাটানোর যে ভিডিও ভাইরাল হতেই বিপাকে পড়েন তৃণমূলের ওই মহিলা নেত্রী। যদিও তার দাবি ছিল ওই আদিবাসী মহিলারা নিজে থেকেই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। কিন্তু সেই যুক্তি মানতে নারাজ দল। যার পরিপ্রেক্ষিতে এদিন প্রদীপ্তা চক্রবর্তী কে তার পদ থেকে সরিয়ে দেয় রাজ্য নেতৃত্ব। শুধু তাই নয়, দলের সমস্ত কাজকর্ম থেকে তাকে বিরত থাকার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে রাজ্যের তরফে। একইসাথে পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যানের পদ থেকেও তাকে সরানো হতে পারে বলে দলীয় সুত্রের খবর। রবিবার সন্ধ্যায় রাজ্যের তরফে এ ব্যাপারে একটি বিশেষ নির্দেশিকা আসতেই সাংবাদিক বৈঠক করেন জেলা তৃণমূল সভাপতি মৃণাল সরকার। যেখানেই তিনি জানিয়েছেন, মহিলা সভাপতির পদ থেকে প্রদীপ্তা চক্রবর্তী কে সরানোর কথা। একইসাথে সেই জায়গায় আনা হয়েছে স্নেহলতা হেমব্রমকে বলেও জানানো হয়েছে। রাজ্যের তরফে এব্যাপারে বিশেষ নির্দেশিকা আসবার পরেই তা ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে এই ঘটনা নিয়ে অভিযুক্ত ওই মহিলা নেত্রীকে গ্রেপ্তারের দাবিতে রাস্তায় নেমে আন্দোলন বাম মহিলা সংগঠন ও বিজেপির। তাদের দাবি দলীয় পদ থেকে সরিয়ে আইওয়াশ নয়, অবিলম্বে তাকে গ্রেফতার করে সুনির্দিষ্ট ধারায় মামলা রজু করা হোক। এদিন এই একই দাবিতে বালুরঘাট থানা সহ জেলার প্রায় সবকটি থানায় ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান বিজেপির নেতা কর্মীরা। একইভাবে এই ঘটনার প্রতিবাদে শহরজুড়ে একটি মিছিল করে বালুরঘাট থানার সামনে বিক্ষোভ করতে দেখা যায় আর এসপির মহিলা সংগঠনকে। এদিকে এই ঘটনার আটচল্লিশ ঘন্টা পার হবার পরেও কেন পুলিশ এখনও কোন এফ আয়ের করেনি তা নিয়ে সোমবার বালুরঘাট শহর অবরুদ্ধ করতে আসছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সোমবার শহরজুড়ে বিক্ষোভ মিছিল করে জেলাশাসক অফিসের সামনে অবস্থান বিক্ষোভে নামবেন রাজ্যের ওই দুই হেভিওয়েট নেতা।
জেলা তৃণমূল সভাপতি মৃণাল সরকার বলেন, রাজ্যের নির্দেশে প্রদীপ্তা চক্রবর্তীকে মহিলা তৃণমূলের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার পরিবর্তে স্নেহলতা হেমব্রমকে সেই জায়গায় আনা হয়েছে। একই সাথে দলের সমস্ত কাজকর্ম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রদীপ্তা চক্রবর্তীকে।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক বাপি সরকার জানিয়েছেন, দলের পদ থেকে ওই অভিযুক্ত মহিলাকে সরিয়ে আইওয়াশ করবার চেষ্টা করছে তৃণমূল। আদিবাসী মহিলাদের সাথে যে বর্বরতার ঘটনা ঘটিয়েছে তার জন্য অবিলম্বে তার গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন তারা। সুনির্দিষ্ট ধারায় মামলা রজু করে তার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ গ্রহন করার জন্য রাস্তায় নামছেন তারা।
আর এস পির মহিলা সংগঠনের জেলা নেত্রী সুচেতা বিশ্বাস জানিয়েছেন, আদিবাসী ওই মহিলাদের সাথে যে মধ্যযুগীয় বর্বরতার ঘটনা ঘটেছে, তার জন্য অভিযুক্ত এই মহিলার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তারা। যার প্রতিবাদে এদিন রাস্তায় নেমে আন্দোলন তাদের।

