দক্ষিণ দিনাজপুরে বিপ্লবেই আস্থা মমতার! আদিবাসী ভোট ব্যাঙ্ক ধরে রাখতে সভাধিপতির জেনারেল আসনে বসানো হল চিন্তামণি বিহা কে।

উত্তরবঙ্গ কলকাতা খেলা দক্ষিণবঙ্গ দেশ প্রথম পাতা বিদেশ বিনোদন রবিবার রাজ্য শরীর ও স্বাস্থ্য

, বালুরঘাট, ১৪ আগষ্ট ——–— দক্ষিণ দিনাজপুরের উন্নয়নে বিপ্লবেই আস্থা রাখলো মমতা। সোমবার জেলা পরিষদের সভাধিপতি হিসেবে চিন্তামণি বিহার নাম ঘোষণা হতেই কার্যত স্পষ্ট হয়েছে সেই বার্তা। শুধু তাই নয়, লোকসভা নির্বাচনের আগে আদিবাসী ভোট ব্যাঙ্ককে পকেটে পুরতে জেনারেল ওই আসনে বসানো হয়েছে তপশিলী উপজাতি মুখকে। যা নিয়েই শুরু হয়েছে জোর চর্চা। যদিও অনেকে মনে করছেন দন্ডি কান্ডের ঘটনা নিয়ে বিশেষ বার্তা দিতেই জেলার সর্ব্বোচ্চ প্রশাসনিক চেয়ারে বসানো হয়েছে আদিবাসী মুখকে। একইসাথে তপশিলী জাতির জন্য সংরক্ষিত সহকারী সভাধিপতির ওই আসনে সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনেই বসানো হয়েছে জেলার যুব তৃণমূল সভাপতি অম্বরিশ সরকারকে। এদিন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাপরিষদের যশোদা ভবনে ২১ জন তৃণমূল সদস্যর উপস্থিতিতে খাম বন্দী প্যাকেট খুলেই ঘোষণা করা হয় সভাধিপতি ও সহকারী সভাধিপতির নাম। যেখানে নবনির্বাচিত জেলা পরিষদ সদস্যরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। এরপরেই উন্মুক্ত মঞ্চে সভাধিপতি, সহকারী সভাধিপতি সহ জেলাপরিষদের সকল সদস্যদের সংবর্ধনা দেওয়া হয় জেলা প্রশাসনের তরফে।

প্রসঙ্গত, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার উন্নয়নের চাবিকাঠি কার হাতে থাকবে তা নিয়ে পঞ্চায়েত ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর থেকেই শুরু হয়েছে নানা জল্পনা। যার মধ্যে একদিকে যেমন রয়েছে জেলা তৃণমূল সভাপতি মৃণাল সরকার, অন্যদিকে রয়েছে প্রাক্তন সাংসদ তথা প্রাক্তন জেলা সভাপতি অর্পিতা ঘোষও এবং এসবের বাইরে রয়েছেন দলের বহু পুরোনো মুখ তথা মন্ত্রী বিপ্লব মিত্র। সভাধিপতির চেয়ারে কে বসবে বা দলের হাইকমান্ডের কাছে কার গুরুত্ব বাড়বে তা নিয়ে চলতে থাকে নিজেদের মধ্যে ঠান্ডা রাজনৈতিক লড়াইও। যে হিসাবেই কখনো সভাধিপতি হিসাবে মৃণাল সরকার, কখনো অম্বরিশ সরকার আবার কখনো আমজাদ মন্ডলের নাম তুলে এনেছেন তাদের অনুগামীরা। যা নিয়ে জেলাজুড়ে চলে নানা বিতর্কের ঝড়ও। কিন্তু এদিন জেলাপরিষদে আসা খামবন্দী সেই প্যাকেট খুলতেই যেন কিছুটা মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায় কিছু সদস্যদের। রীতিমতো চর্চার বাইরে থাকা ওই আসনে চিন্তামণি বিহার নাম সভাধিপতি হিসাবে ঘোষণা হতেই তুমুল আলোড়ন তৈরি হয় খোদ জেলাপরিষদের সদস্যদের মধ্যে। প্রায় ১৫ বছর আগে তপন থেকে অন্যতম আদিবাসী মুখ হিসাবে চিন্তামণি বিহাকে রাজনীতির আঙিনায় তুলে এনেছিলেন ততকালীন তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র। অত্যন্ত সহজ ও সাধারণ ভাবে জীবন যাপন করা চিন্তামনি বিহা টানা তিনবার তৃণমূলের হয়ে জয়ী হন তপন এলাকা থেকেই। যাকেই এবারে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাপরিষদের সভাধিপতি হিসাবে বেছে নিয়েছেন খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। আর এরপরেই তাকে ঘিরে নানা জল্পনা তৈরি হয়েছে জেলার রাজনৈতিক মহলে। তবে কি বিপ্লবের উপরেই ভরসা রাখলেন মমতা ? চিন্তামনি বিহাকে সভাধিপতি করতেই এমন জোড়ালো প্রশ্ন উসকে উঠেছে গোটা দক্ষিন দিনাজপুর জেলাতে। এখানেই শেষ নয়, সভাধিপতির ওই চেয়ারটি এবারে সাধারনের জন্য বরাদ্দ থাকলেও সেখানে কেন আদিবাসী মহিলা মুখকে তুলে আনলো তৃণমূল সেই প্রশ্নও উস্কে উঠেছে এদিনের এই ঘোষণার পরে। যদিও এর কারন হিসাবে অনেকেই দন্ডি কান্ডের ঘটনাকে সামনে এনেছেন। তাদের দাবি লোকসভা নির্বাচনের আগে দন্ডি কান্ড নিয়ে কড়া বার্তার পাশাপাশি আদিবাসী ভোট ব্যাঙ্ক নিজেদের দখলে রাখতেই জেলার সর্ব্বোচ্চ পদে আদিবাসী মুখকে বসিয়ে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছে তৃণমূল। যদিও বিপ্লব মিত্রের দাবি, দলের অন্দরে পর্যবেক্ষনের মাধ্যমেই সভাধিপতি মনোনিত হয়েছে। যার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরের মন্ত্রী বিপ্লব মিত্র বলেন, দলের সুপ্রিমোর নির্দেশেই চিন্তামনি বিহাকে এদিন সভাধিপতি এবং অম্বরিশ সরকার কে সহকারী সভাধিপতি করা হয়েছে। আগামী ২৪ তারিখে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হবে জেলা পরিষদে।

দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি চিন্তামনি বিহা বলেন, মানুষের জন্যই কাজ করবেন তিনি। আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার উন্নয়নকে গুরুত্ব দেওয়ায় তার প্রধান লক্ষ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *