দক্ষিণ দিনাজপুরের শিল্পসত্ত্বা পাড়ি দিচ্ছে এবারে বিদেশেও। চকভৃগুর দুই শিল্পীর হাতে তৈরি সুদৃশ্য পাইন কাঠের হাঁস দিশা দেখাচ্ছে মহিলাদের অর্থ উপার্জনেও

উত্তরবঙ্গ কলকাতা খেলা দক্ষিণবঙ্গ দেশ প্রথম পাতা বিদেশ বিনোদন রবিবার রাজ্য শরীর ও স্বাস্থ্য

 

 বালুরঘাট, ১৩ মে:—-— দক্ষিণ দিনাজপুরের শিল্পসত্ত্বা এবারে রাজ্য ও দেশ ছাড়িয়ে পাড়ি দিচ্ছে বিদেশেও। সোশ্যাল মাধ্যমে কাজের সুযোগ পেয়েই দিনরাত এককরে পাইন কাঠের হাঁস তৈরি হচ্ছে জেলার প্রান্তিক শহরে। আর যার ফলে ক্রমশ স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন বালুরঘাটের মহিলারা। শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে চকভৃগু গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত নলতাহার গ্রামে এই সুদৃশ্য হাঁস তৈরি হচ্ছে বেশকিছুদিন ধরেই। পাইন গাছের নানা টুকরো নবান সরকার ও তার ছেলে বিপ্লব সরকারের হাতের কায়দায় রুপ পাচ্ছে কাঠের হাঁসে। কলকাতা থেকে পাওয়া দুহাজার টি কাঠের হাঁস তৈরির বরাত পেয়ে ইতিমধ্যেই স্থানীয় মহিলারা নিযুক্ত হয়েছেন এই অর্থ উপার্জনে। আর যার ফলে কিছুটা হাসি ফুটেছে গ্রামের মহিলাদের মুখেও।

ঘটনার সূত্রপাত সোশ্যাল মাধ্যমে। কলকাতার একটি সংস্থা একটি বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি ও নির্দিষ্ট আকার, আয়তনের হাঁস তৈরির কথা লিখেছিল সোশ্যাল মাধ্যমে। সেটি নজরে পড়ে সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা বালুরঘাটের বিপ্লবের। যার পরেই তিনি এই হাঁস তৈরি করতে পারবেন বলে সুনির্দিষ্ট ওই সংস্থাকে জানিয়েছিলেন তারা। তাদের মতো রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রচুর মানুষও সেই হাঁস তৈরির ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। সকলের মতো বিপ্লবও চাহিদা অনুযায়ী হাঁস তৈরি করে তার নমুনা তাদের পাঠিয়েছিলেন। সেই হাঁস পছন্দ হয় ওই সংস্থার। তারপরেই সেই সংস্থা থেকে সবুজ সংকেত পায় এই কারিগর। ইতিমধ্যেই প্রথম দফায় দুই হাজারটি হাঁস তৈরির বরাত পেয়েছেন তিনি। যেখানে প্রতি হাঁস পিছু নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। রাজধানী শহর থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণে পাইন কাঠও এসে পৌঁছাচ্ছে বালুরঘাটে। তারপর সেই কাঠ বিভিন্ন সরঞ্জাম দিয়ে নির্দিষ্ট আকারে নিয়ে এসে হাঁস তৈরি করছেন পিতা পুত্র। শুধু হাঁস তৈরি করা নয়, তারপরে রয়েছে মসৃণ পালিশও। এই হাঁস কেউ এই ক্ষুদ্র কারখানা থেকে কিনতে চাইলে প্রতি হাঁস পিছু হাজার থেকে বারোশো টাকা দিতে হবে। এই হাঁস কলকাতা থেকে সৌখিন গ্রাহকদের জন্য বিদেশেও পাড়ি দিচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। বিপুল পরিমাণ এই হাঁস তৈরিতে তারা স্থানীয় মহিলাদেরও কাজে নিযুক্ত করেছেন। বর্তমানে সাতজন মহিলা এখানে কর্মরত। আগামীতে আরও কাজের বরাত পাওয়ার আশা রয়েছে বলে শিল্পীরা জানিয়েছেন।

শিল্পী নবান সরকার বলেন, ‘এমন কাজ আগে কখনও করিনি। তবে তাদের চাহিদা অনুযায়ী হাঁস তৈরির জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। তারপরে সঠিক আকার ও আয়তনের হাঁস তৈরি আয়ত্তে এনেছি। অনেক মহিলারা এই কাজ করে ক্রমশ স্বাবলম্বী হচ্ছেন। ইতিমধ্যেই হাঁসগুলি তৈরি করে প্যাকেটজাত করা হয়েছে। সেগুলি কলকাতা থেকে গাড়ি পাঠানোর পরে চলে যাবে।’

শিল্পী বিপ্লব সরকার জানান, ‘উচ্চ মাধ্যমিকে পাশ করেছি। এখন কলেজে ভর্তি হব। আগে থেকেই খুঁটিনাটি জিনিস তৈরি করতাম। তারপরে সোশ্যাল মাধ্যমে এরকম পোস্ট দেখে উৎসাহী হই। আমার পাঠানো নমুনা তাদের পছন্দ হওয়ায় তারা ২০০০টি হাঁসের বরাত দিয়েছেন। সেগুলি তারা আবার বাইরে রপ্তানি করবে। দিনে প্রায় ১০ টি হাঁস তৈরি করতে পারি। স্থানীয় মহিলাদের আরও বেশি করে কাজে নিযুক্ত করে তাদের স্বাবলম্বী করে তোলার ইচ্ছে আছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *