কোচবিহার মাহরাজাদের শুরু করা ৫০০ বছরের দুর্গাপূজা

উত্তরবঙ্গ কলকাতা দক্ষিণবঙ্গ দেশ প্রথম পাতা বিদেশ বিনোদন রবিবার রাজ্য শরীর ও স্বাস্থ্য

 

 কোচবিহার ——————

 

গোটা বাংলা জুড়ে যখন দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে তখন কোচবিহারে বড়দেবীর পুজোকে ঘিরে জোর ব্যস্ততা। রাজ আমলের ৫০০ বছরের বেশি প্রাচীন পুজো এখনো সেই রাজ আমলের নিয়মে হয়ে আসছে। বড় দেবী প্রতিমা রং রুপ সব অন্যান্য দুর্গা সে আলাদা । পূজায় রয়েছে বালি প্রথা নিয়ম । এক সময় নর বলি দেওয়া হয়েছিল । বর্তমান এই পূজায় নর রক্ত দেওয়া হয় ।
বড়দেবী নামে পরিচিত কোচবিহার বড়দেবীর পুজো ঘিরে নানা কাহিনী রয়েছে।কেউ বলেন, মহারাজা নর নারায়ন স্বপ্নাদেশ পেয়ে দেবী পুজোর সূচনা করেন। আবার কেউ বলেন, মহারাজা বিশ্ব সিংহ মাত্র ৯বছর বয়সে খেলার চ্ছলে শুকনো ময়না কাঠের ডাল ও বাশের কঞ্চি মাটিতে পুতে দেবি দুর্গা কল্পনা করে পুজা করেছিলেন । সম্ভবত সেটাই রাজ পরিবারের দুর্গা পুজা সুচনা । শ্রাবণের শুক্লা অষ্টমীতে কোচবিহার ডাঙ্গুরাই মন্দিরে ময়না কাঠের যুগছেদন পূজার মধ্য দিয়ে কোচবিহার বড় দেবির পুজা সুচনা হয় । ময়না কাঠের উপর বড় দেবীর মায়ের প্রতিমা তেরী করা হয়। শ্রাবণের শুক্লা অষ্টমীতে তিথিতে কোচবিহার ডাঙ্গুরাই মন্দিরে ময়না কাঠের পুজা হয় ।সেই দিনই সন্ধ্যায় ময়না কাঠটিকে কোচবিহার মদন মোহন বাড়িতে নিয়ে আসা হয় । মদন মোহন মন্দিরে একমাস পুজা হওয়ার পর রাধা অষ্টমী তে ময়না কাঠটিকে পালকিতে চেপে নিয়ে যাওয়া হয় বড়দেবী মন্দিরে । সেখানে তেরি হয় বড়দেবী মুর্তি । বর্তমানে মুর্তি বানানো কাজ চলছে জোর কদমে । এই মুর্তি তেরি করে আসছেন রাজ পরম্পরা অনুযায়ী কোচবিহার চিত্রকর পরিবারের সদস্যরা । বর্তমানে চিত্রকর পরিবারের সদস্য প্রভাত চিত্রকর এই মুর্তি নির্মান করে আসছে বিগত ৩৫ বছর ধরে ।এই প্রতিমা সব থেকে আলদা । মায়ের মুখ আলাদা । পাশাপাশি মায়ের প্রতিমার দু পাশে গণেশ,লক্ষি, সরস্বতী কার্তিক থাকে না । দুপাশে থাকে জয়া ও বিজয়া । রয়েছে বলি প্রথাও । সপ্তমী থেকে দশমী বিসর্জনের দিন বলি হয় ।বিসর্জনে দিন মুলত সুওর বলি হওয়ার পর মায়ের বিসর্জন তিথি নিয়মে সকাল সকাল করা হয় ।

জানা গিয়ছে এক সময় নর বলি হত এই পুজায় । তবে এখন সেটা উঠে গেলেও এখনও নর রক্ত দেওয়া নিয়ম রয়েছে বড় দেবী পুজায় । অষ্টমি রাতে বিশেষ পুজা অনুষ্ঠিত হয় । গুপ্ত পুজা বলা হয় সেই পুজাকে । সেখানে রাজ পরম্পরা অনুসারে কোচবিহারের সিদ্ধেশ্বরী এলাকার রায় পরিবারের সদস্যরা আঙুল কেটে রক্ত দেন এই পুজায় । যদিও সেই সময় সেখানে কেও থাকে না । পাশাপাশি অষ্ঠমির দিন দিনের বেলা নিয়ম মত মোষ বলি হয় । রাজা না থাকলেও রাজ আমলের সব নিয়ম এখনো চলছে। পুজা ঘিরে বড় দেবি মন্দির এলাকা দেবি বাড়ি এলাকায় বসে মেলাও । শুধু তাই না কোচবিহারের মানুষ বড় দেবি দর্শন করে অন্য প্রতিমা দেখতে বের হয় । কোচবিহার জেলার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো সহ নিম্ন অসম থেকে বহু মানুষ বড় দেবি দর্শন করতে আসেন ।
রাজ পুরোহিত হীরেন্দ্র নাথ ভট্টাচার্জী বলেন, কোচবিহার মহারাজাদের শুরু করা এই পূজার সমস্ত রীতি নীতি রাজ আমলের নিয়মই হয়ে আসছে । সপ্তম অষ্টমী নবমী পূজাতে বলি প্রথা নিয়ম রয়েছে । অষ্টমীর দিন রাজ প্রতিনিধি হিসেবে কোচবিহার জেলা শাসক প্রথম অঞ্জলি দেন এরপরে সাধারণ মানুষের অঞ্জলি দেন । কোচবিহারে সবার প্রথম কোচবিহার বড় দেবী বিসর্জন হয় সকাল সকাল। এ পূজা কে ঘিরে আজও কোচবিহারে রাজ ঐতিহ্য মানুষের সামনে উঠে আসে ।
একই সঙ্গে এবার রাজ পুরোহিত হিরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য পূজা করতে পারবেন না। তার কারণ তিনি অসুস্থ রয়েছে। তাই কিছুটা হলেও তার মন খারাপ । এবছর পূজা করব না তার ভাই ধিনেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য । তিনিও কোচবিহার দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ড অধীনে কোচবিহার রাজমাতা দিঘি মন্দিরে পুরোহিত হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন ।

দিনেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, মায়ের পূজা করব আনন্দ হচ্ছে । দাদা অসুস্থ থাকার কারণে আমি এ বছর পূজা করব ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *