পিন্টু কুন্ডু, বালুরঘাট, ৭ অক্টোবর ——– কাশী যাওয়ার ইচ্ছে ছিল লক্ষ্মী নারায়নের। কিন্তু তাঁর সেই তীর্থযাত্রা শেষ হল একেবারে অন্যরকমভাবে। ট্রেনে ওঠার পর আর কোনো খোঁজ মেলেনি বৃদ্ধের। অন্ধ্রপ্রদেশের বাড়ি থেকে হাজার কিলোমিটার দূরে হঠাৎ করেই একদিন হাজির হন বাংলার বালুরঘাট স্টেশনে! ক্লান্ত, অসুস্থ, এবং শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন নিয়ে কাঁপতে কাঁপতে পড়ে ছিলেন প্ল্যাটফর্মে। যেখান থেকেই তাঁকে উদ্ধার করে ২৫ সেপ্টেম্বর তারিখে হাসপাতালে ভর্তি করে বালুরঘাট থানার পুলিশ। ঘটনার আসল মোড় ঠিক এখানেই—শরীর সুস্থ হলেও পরিচয় জানতে গিয়ে চরম সমস্যায় পড়ে বালুরঘাট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কারণ, লক্ষ্মী নারায়ন শুধু তেলেগু ভাষায় কথা বলতে জানেন, যা হাসপাতালের কেউই বুঝতে পারছিলেন না! বারবার জিজ্ঞেস করেও পরিবারের কোনো তথ্য বের করা সম্ভব হয়নি তার কাছ থেকে। যা নিয়ে একপ্রকার হাল ছেড়ে দিতে বসেছিলেন প্রায় সকলেই, ঠিক তখনই লক্ষ্মী নারায়নের মুখে একবার শুনতে পান একটি শব্দ—“হায়দ্রাবাদ”। আর এই একটিমাত্র সূত্র হাতে নিয়েই হাসপাতালের কর্মীরা ঠিক করেন, প্রযুক্তির সাহায্যে খুঁজে বার করবেন বৃদ্ধের পরিচয়।
এরপরই গুগল ম্যাপের সাহায্যে শুরু হয় বৃদ্ধর বাড়ির খোঁজ। একের পর এক সম্ভাব্য ঠিকানা ও নামের মিল খোঁজার পর, অবশেষে মেলে বৃদ্ধের পরিবারের হদিস! সোমবার সেই সুত্র ধরেই বৃদ্ধর ছেলে এবং নাতি এসে পৌঁছেছেন বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে। ১৭ দিন পর বাবাকে ফিরে পেয়ে আবেগে ভেসে যান তাঁরা। গুগল ম্যাপ, তৎপর হাসপাতাল কর্মী এবং পুলিশের সহযোগিতায় অবশেষে নিখোঁজ বৃদ্ধকে সুস্থ অবস্থায় ফিরে পেয়েছে পরিবারের লোকেরা।
বালুরঘাট হাসপাতাল সুপার কৃষ্ণেন্দু বিকাশ বাগ বলেন, “ওই বৃদ্ধকে নিজের বাড়িতে ফিরিয়ে দিতে পেরে তারা অত্যন্ত আনন্দিত। ভাষা, দূরত্ব—সবকিছুই কাটিয়ে উঠতে পারে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার।” শুধু তাই নয় এই ঘটনা আবারও প্রমান করলো প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারে মানবতার জয় সম্ভব।
এদিকে বাবাকে ফিরে পেয়ে খুশির ঢেউ লক্ষ্মী নারায়নের পরিবারের মধ্যে। বৃদ্ধর নাতি গৌরি শঙ্কর বলেন, আজকের এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করলো, প্রযুক্তি এবং মানবিকতার মেলবন্ধন যে কতটা শক্তিশালী হতে পারে!

